লোকসভায় বিতর্ক: অপারেশন সিন্দুর ও পহেলগাম হামলা নিয়ে শাসক-বিরোধী তরজা

লোকসভায় বিতর্ক: অপারেশন সিন্দুর ও পহেলগাম হামলা নিয়ে শাসক-বিরোধী তরজা
সর্বশেষ আপডেট: 18 ঘণ্টা আগে

লোকসভায় অপারেশন সিন্দুর এবং পহেলগাম জঙ্গি হামলা নিয়ে দুদিন ধরে বিতর্ক হয়েছে। বিরোধীরা নিরাপত্তা ত্রুটি এবং জবাবদিহিতার প্রশ্ন তুলেছে। সরকার জঙ্গিদের নির্মূল এবং কৌশলগত সাফল্যের দাবি করেছে।

Monsoon Session: লোকসভায় দুদিন ধরে চলা বিশেষ বিতর্কে অপারেশন সিন্দুর এবং পহেলগাম জঙ্গি হামলা নিয়ে শাসক ও বিরোধী পক্ষ মুখোমুখি অবস্থানে ছিল। বিরোধীরা সরকারের কাছে নিরাপত্তা ত্রুটি, অভিযানের স্বচ্ছতা এবং বিদেশি হস্তক্ষেপের মতো বিষয়ে জবাব চেয়েছে। একই সময়ে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জঙ্গিদের বিরুদ্ধে নেওয়া পদক্ষেপ, ভারতের কৌশলগত ক্ষমতা এবং পূর্ববর্তী সরকারগুলির নীতির তীব্র সমালোচনা করেছেন। এই বিতর্ক নিরাপত্তা, কূটনীতি এবং জবাবদিহিতার মতো বিষয় নিয়ে সংসদে একটি নির্ণায়ক মোড় নিয়েছে।

১. পহেলগাম হামলায় জড়িত জঙ্গিদের কী হয়েছিল?

লোকসভার বিতর্কের শুরুতেই এই প্রশ্ন ওঠে যে পহেলগামে জঙ্গি হামলায় জড়িত জঙ্গিদের পরিণতি কী হয়েছে। বিরোধী দলের নেতারা—রাহুল গান্ধী, প্রিয়াঙ্কা গান্ধী এবং অখিলেশ যাদব—একযোগে জানতে চান হামলাকারী জঙ্গিরা কোথায়?

এই প্রশ্নের উত্তর দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তিনি জানান, সেনা "অপারেশন মহাদেব"-এর অধীনে পহেলগাম হামলায় জড়িত তিন জঙ্গি—সুলেমান, আফগান এবং জিবরান—কে খতম করেছে। শাহ আরও বলেন, এই জঙ্গিদের পাকিস্তানি হওয়ার পাকাপোক্ত প্রমাণ সরকারের কাছে রয়েছে।

২. হামলা কিভাবে হল, নিরাপত্তায় ত্রুটির দায় কার?

আলোচনার দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল নিরাপত্তা ব্যবস্থার ত্রুটি। কংগ্রেস নেতা গৌরব গগৈ এবং সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব জানতে চান, গোয়েন্দা সংস্থাগুলি আগে থেকে সতর্ক থাকা সত্ত্বেও কীভাবে জঙ্গিরা উপত্যকায় প্রবেশ করতে পারল?

অমিত শাহ এর উত্তরে বলেন যে, সরকার এর দায় নিচ্ছে এবং অস্বীকার করছে না। তিনি নিরাপত্তা বাহিনীর সাহস এবং উপত্যকার কঠিন ভৌগোলিক পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করেন। একই সাথে তিনি বলেন, জঙ্গি হামলার পরপরই সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে এবং জঙ্গিদের নির্মূল করা হয়েছে।

৩. ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতি দাবি: সত্যিটা কী?

বিতর্কের সময় একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ওঠে মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি কথিত দাবি নিয়ে, যেখানে তিনি বলেছিলেন যে তিনি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি করিয়েছিলেন। বিরোধীরা এটিকে সরকারের বিদেশনীতির উপর প্রশ্ন হিসেবে উত্থাপন করে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জবাব দিতে গিয়ে বলেন, ভারত তার নিরাপত্তার বিষয়ে কোনো বিদেশি শক্তির হস্তক্ষেপ গ্রহণ করে না। তিনি বলেন, পাকিস্তান হাঁটু গেড়ে দেওয়ার পরেই অপারেশন বন্ধ করা হয়েছিল, কোনো বিদেশি চাপে নয়।

মোদি আরও জানান যে, মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভেন্সের সাথে আলোচনা হয়েছিল, তবে ভারতের নীতি স্পষ্ট—আমরা কোনও হুমকিকে ভয় পাই না এবং আমাদের শর্তেই পদক্ষেপ নেওয়া হবে। বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করও এই বিষয়ে সরকারের অবস্থান জোরালোভাবে তুলে ধরেন।

৪. রাফায়েল বিমান ভেঙে পড়া নিয়ে অস্পষ্টতা

কংগ্রেস সাংসদ অমরিন্দর সিং রাজা ওয়ারিং সংসদে দাবি করেন যে পাঞ্জাবে রাফায়েল বিমানের একটি অংশ ভেঙে পড়েছিল, যাতে একজন ব্যক্তি মারা গেছেন এবং অনেকে আহত হয়েছেন। তিনি প্রমাণ হিসেবে ছবিও দেখান।

তবে, কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো স্পষ্ট তথ্য দেওয়া হয়নি। প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং বিরোধীদের প্রশ্নকে 'অ-राष्ट्रवादी' আখ্যা দিয়ে বলেন, প্রশ্ন করা উচিত আমাদের বায়ুসেনা কতজন শত্রুর ঘাঁটি ধ্বংস করেছে। তিনি আরও বলেন যে, অপারেশন এখনও পুরোপুরি শেষ হয়নি, তাই এ সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য এখনই দেওয়া যাবে না।

৫. অপারেশন সিন্দুরের উদ্দেশ্য ও কৃতিত্ব

প্রধানমন্ত্রী মোদি লোকসভায় স্পষ্ট করে বলেন যে, অপারেশন সিন্দুর শুধুমাত্র একটি প্রতিশোধমূলক সামরিক অভিযান ছিল না, বরং এটি ভারতের নতুন সন্ত্রাসবাদ-বিরোধী নীতির অংশ ছিল। তিনি বলেন, এই অপারেশনটি পাকিস্তানের পরমাণু ব্ল্যাকমেইলের জবাব দেওয়ার জন্য করা হয়েছিল এবং এর মাধ্যমে ভারত স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, তারা এখন জঙ্গি এবং তাদের পৃষ্ঠপোষকদের মধ্যে কোনও পার্থক্য করবে না।

মোদি জানান, ২২ এপ্রিল পহেলগামে জঙ্গি হামলার জবাব ভারতীয় সেনা মাত্র ২২ মিনিটের মধ্যে দিয়েছে। সেনা জঙ্গিদের লঞ্চপ্যাড এবং ট্রেনিং ক্যাম্পকে নির্ভুলভাবে निशाना করে ধ্বংস করেছে। প্রধানমন্ত্রী মোদি এই অপারেশনকে ভারতের কৌশলগত ও সামরিক সক্ষমতার প্রমাণ হিসেবে উল্লেখ করেন।

৬. পিওকে কেন নেওয়া হল না?

বিরোধীরা যুক্তি দেখান যে, যখন পাকিস্তান হাঁটু গেড়ে ছিল, তখন ভারত কেন পিওকে (PoK) ফেরত নিল না। এর উত্তরে প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, অপারেশন সিন্দুরের উদ্দেশ্য ছিল জমি দখল করা নয়, বরং পাকিস্তানের জঙ্গি পরিকাঠামো ধ্বংস করা।

তিনি কংগ্রেসকে আক্রমণ করে বলেন যে, যারা আজ পিওকে নিয়ে কথা বলছেন, তাদের আগে জবাব দিতে হবে যে পিওকে-র উপর পাকিস্তান কে कब्जा করার সুযোগ কোন সরকারের আমলে হয়েছে।

৭. নেহরুকে নিয়ে তীব্র রাজনৈতিক বিতর্ক

প্রধানমন্ত্রী মোদি বিতর্কের সময় পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুর নাম উল্লেখ করে বলেন, স্বাধীনতার পর নেওয়া ভুল সিদ্ধান্তের খেসারত দেশ আজও দিচ্ছে। তিনি আকসাই চীন, রণ অফ কচ্ছ এবং কর্তারপুরের মতো বিষয়ে কংগ্রেসের নীতিকে ব্যর্থ বলে অভিহিত করেন।

মোদি বলেন, ১৯৭১ সালের যুদ্ধের পর যখন ভারত পাকিস্তানের ৯৩,০০০ সৈন্যকে বন্দী করে এবং আঞ্চলিক बढ़त हासिल করে, তখনও কংগ্রেস সরকার পিওকে পুনরুদ্ধারের কোনো চেষ্টা করেনি। অমিত শাহও কংগ্রেস ও সমাজবাদী পার্টির সমালোচনা করে বলেন, যারা আজ প্রশ্ন করছেন, তারা নিজের দায়িত্ব থেকে পালাচ্ছেন।

Leave a comment